নিউজ ডেস্ক : দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) দায়িত্ব নিয়েই নীরবে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ করে যাচ্ছে, জানুয়ারির মধ্যে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন দেখে নির্বাচনি সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে নির্বাচনি আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট কমিটি। ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে ইতোমধ্যে চিঠি ইস্যু করেছে নির্বাচন কমিশন। গত রবিবার সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন। সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন মালামাল সংগ্রহের বিষয়েও কাজ চলছে।
জানা গেছে, এসবের পাশাপাশি আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ; সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নির্বাচন প্রস্তুতি, ভোট কেন্দ্র স্থাপন, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও তদারকি কমিটির প্রধান আনোয়ারুল ইসলাম সরকার; প্রশাসনিক সংস্কার এবং পুনর্বিন্যাস ও দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত কমিটির প্রধান তহমিদা আহমদ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ কমিটির প্রধান আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রস্তুতি তো থাকতেই হবে। সবাই আমরা একটা ভালো কিছু চাই; সেটাই হবে। একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। গুরুত্ব অনুযায়ী কাজগুলো এগিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আগামী ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকা হালনাগাদের খসড়া প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এরপর নতুন ভোটারদের ভুলভ্রান্তি সংশোধনে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ দিন আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে। ভোটার তালিকার বিষয়ে অন্যদের কোনো দাবি-আপত্তি থাকলে, সেই বিষয়ে ১৭ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন করা যাবে। এরপর ইসি দাবি আপত্তিগুলোর নিষ্পত্তি করবে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে। আর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ২ মার্চ। ইসি জানিয়েছে, মাঠ কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখা-২ এর সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, হালনাগাদ করা ভোটার তালিকার খসড়া আগামী ২ জানুয়ারি প্রকাশ করা হবে। এরপর ভুলভ্রান্তি বা কারও কোনো দাবি আপত্তি থাকলে ১৭ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন জানাতে পারবেন। এরপর দাবি আপত্তিগুলোর নিষ্পত্তি করতে হবে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে। আর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ২ মার্চ। অন্যদিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে তৈরি হচ্ছে নির্বাচনি রোডম্যাপ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এবং পরের কার্যক্রমের ধারাবাহিক বর্ণনা থাকছে এই কর্মপরিকল্পনায় (রোডম্যাপ)। এক্ষেত্রে নির্বাচনি মালামাল কেনাকাটা থেকে শুরু করে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত সব কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকবে। সেই অনুযায়ী নির্বাচনি প্রস্তুতি এগিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ইসি সচিবালয় ‘তফসিল ঘোষণার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কার্যক্রম’ শীর্ষক একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। তবে এ খসড়ায় কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এ খসড়া উপস্থাপন করা হবে।
কমিশন প্রতিটি কাজের সময় সীমানা নির্ধারণ করবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা প্রেজেন্টেশন তৈরি করছেন। সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ দেখেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্বাচনি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন। কেননা নির্বাচনি সংস্কারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-সহ অন্যান্য নির্বাচন আইনকানুন সংশোধন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আইন-বিধি সংস্কার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া নির্বাচনের বাজেট প্রস্তুত করার কাজ চলমান রয়েছে। ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) কাছে কাগজ প্রস্তুত রাখতে চিঠি দেওয়া হবে। সংসদ নির্বাচন ছাড়া উপজেলা-সিটি নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য তিন রঙের কাগজ প্রয়োজন হয়। সাধারণত হলুদ, নীল ও গোলাপি রঙের কাগজ দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়। অন্যদিকে নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজ কেনার পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার কার্যক্রমও শুরু হবে রোডম্যাপ চূড়ান্ত হলে।